Search

Onuvutir Soujonye

~ where feeling starts…

আভাস

​চৌকাঠে অপেক্ষমান বসন্ত আমার,

গৃহে বন্দি কলঙ্কিত টান !

তাই, তোকে আজ দু’টো কথা বলি শোন…

নয়তো বসন্তের হবে অভিমান।

জানিস, আমার মন কেমনের সময় গুলোয়,

চোখে থাকে তোর অদৃশ্য প্রকাশ…

মাথায় জানি সবই থাকে, তবু,

তোর ভাবনা, ভালোথাকার নির্যাস !

শোন, বেশি কিছু চাইনে আমি,

শুধু শোনার সময়, চোখে চোখে তাকাস !

আর, না’হয় যাবার বেলায় একটু হেসে,

ছোট্ট একটা আভাস দিয়ে যাস !

ছবির ‘নারী’

নারী… প্রকৃতির আর এক রূপ নাকি নারী ! আজ, এই নারী শরীরকে নিয়ে এক প্রাকৃতিক গল্প লিখলাম। বা এক কাল্পনিক ছবি আঁকলাম.. শেষে নারীটিকে করবো এক প্রশ্ন। নারী আমার উত্তর দেবে ঠিক… ঠিক জানি !

দেখেছো, গোধূলি লগ্নের লাল সূর্যটা কি অহংকারী হয় না ! চওড়া কপাল, যেন দিগন্ত প্রশস্ত ঘন কালো চুলের মতো টুকরো টুকরো মেঘ মিশ্রিত এক সুদূর প্রসারী আকাশ। আকাশে সেই অহংকারী লাল সূর্য, তার তেজস্বী প্রভা বিছিয়ে দিয়ে যাচ্ছে চারদিকে। লাল সিঁদুরের ফোঁটার ন্যায় ওই লাল সূর্য অস্ত চলে যাচ্ছে যেন সেই আকাশের এক প্রান্তে। সূর্যাস্তের হাত ধরে ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসে আকাশের চক্ষুযুগলে। জ্বলজ্বল করতে থাকে ঘন কালো আকাশের বুকে দুটো তারা। আকাশের নিচে ওই দূরে দেখা যায় দুই যমজ পাহাড়… তীক্ষ্ণ তার চূড়া। দুই পাহাড়ের মাঝে চলে যায় সরু এক রাস্তা। কাঁকুড়ে নয় সে রাস্তা। বরং মসৃণ এক চামড়ার মোড়কে মোড়া সেই রাস্তা…

শখ করে, আবেগের দোলাচলে দুলতে দুলতে আঙুল ছুঁয়ে মাপবো আমি, সেই রাস্তার গভীরতা। অনুভবে আচমকা বৃষ্টি নামবে পাহাড়ের নিচে, রাস্তাটা নামতে নামতে ঠিক যেখানে শেষ হয়ে মিলিয়ে গেছে, সেখানের গভীর এক খাদে। অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই খাদ, হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাবে অনেক।
ভালোবাসতে গিয়ে, সেই বৃষ্টিতে ভিজবো আমি…. নামবো সেই খাদে…
ও নারী, বলো তো, ভেজাবে আর কি কি?? সবার মতোই সেই শরীর আর মন বাদে ?

“মিনিট খানেক, সঙ্গে হীরক রাজা ও বিদূষক” ::: বিষয়: “৫০০-১০০০”

হীরক রাজা : বিদূষক, অর্থমন্ত্রীকে ডাকো, কিছু গোপন কথা আছে।

বিদূষক : উনি এখন ব্যাংকে আছেন, টাকা শেষ হয়ে যায় পাছে।


হীরক রাজা : হাঃ হাঃ হাঃ। ভালোই দিলো, কি বলো, ৫০০ – ১০০০ কেস?

বিদূষক : সে আর বলতে রাজন, অনেকে চাপ খেয়েছে বেশ।

হীরক রাজা : সমস্যা কি খুব হচ্ছে নাকি! কি দেখছো চার দিকে?

বিদূষক : আজ্ঞে সমস্যাটা আপেক্ষিক। ম্যাক্সিমাম লাফাচ্ছে হিড়িকে।


এ.টি.এমে টাকা একটু কমই আসছে, তবে মানাতে তো হবেই কিছুদিন।

হীরক রাজা : আরে দিন ১৫-২০ হয়তো, সব সমস্যা হয়ে যাবে বিলীন।

বিদূষক : আজ্ঞে রাজন, রাজ্যে তো দেখছি কিছুজন খুব লাফাচ্ছে!

হীরক রাজা : লাফাবেই তো, আসলে পেছনটা যে আড়াআড়িতেও ফেটেছে।


বিদূষক : মা সারদা চলে যাওয়ায়, কতো লোক ভাসলো জলে।
তখন কেন চুপ ছিলো, রাজ্যের কারিগররা সদলবলে!


হীরক রাজা : বলেছিলাম একদিন, ভরপেট নাও খাও, দিয়ে যেও রাজকর।
শোনেনি সেদিন, নে আজ, জলে ডুবে মর।
বুঝলে বিদূষক, গরিবের কথা মিষ্টি লাগে, হয়ে গেলে বাসি।
এদের আজ অবস্থা দেখছো? চলো একটু হো হো করে হাসি।


বিদূষক : হাঃ হাঃ হাঃ। রাজন, মন্ত্রী তাহলে দূর করলেন, ‘কালো’ আর ‘জালের’ ব্যামো।


হীরক রাজা : সকলে গুণগান করো। বলো “জয় নমো নমো”।

       ©Onuvutir Soujonye – অনুভূতির সৌজন্যে

নিরুত্তর !!

মায়ের দেওয়া ব্রেকফাস্টটা পড়ে আছে টেবিলে তখনও। কি?? না, খেয়ে ওঠার ফুরসৎ টুকু হয়নি এখনও পারমিতার।

– ওরে, এখনও খাসনি? কি যে করিস সকাল থেকে !! এদিক আর ওদিক। খেয়ে নে জলদি। টিউশনের দেরি হয়ে যাবে…

– কত কাজ করলাম, আন্দাজ আছে?

– হ্যাঁ, জানি… তোর কাজের ফিরিস্তি দিস না আর। যা করিস সবই তো তোর নিজের টুকুই… বিয়েটা কর, বুঝবি ঠেলা… 

– মা প্লিজ, বিয়ের কথা আনবে না.. বার বার বলেছি, আমি এখনই এইসব নিয়ে ভাবতে চাইনা। সামনে আমার নেট এক্সাম আছে। আমি সেটা নিয়েই ভাবতে চাই…

বলতে বলতে টেবিলের দিকে গেলো পারমিতা। স্যান্ডউইচ বানিয়েছে মা। একটা কামড় দিয়ে ঘড়িটার দিকে তাকিয়েই মাথায় হাত। ইস্, আজ যে বড্ড লেট হয়ে গেলো.. আধ খাওয়া অবস্থায় জুসের গ্লাসে একটা চুমুক দিয়েই দৌড়ে পড়ার ঘরে গেলো ব্যাগটা নিতে… হন্ত দন্ত হয়ে, “মা, আসছি” বলে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে…
পাড়ার রাস্তাটা আজ একটু বেশিই ফাঁকা। তার উপর আজ আবার রবিবার। এমনিই লোকজন বেরোয়না সেরকম.. খুব দরকার ছাড়া। বাড়ির সামনের গলি থেকে বেরিয়ে সামনের বড় রাস্তায় এসে পৌছালো পারমিতা… এখান থেকে হেঁটে টিউশন যেতে সময় লাগে ওই মিনিট ১৫ মতো… সচরাচর হেঁটেই যায়… “নাঃ, আজ হেঁটে গেলে নির্ঘাত বকা জুটবে কপালে…”, স্বগতোক্তি করলো আর মাথা নাড়লো পারমিতা। তাই, দাঁড়িয়ে রইলো রিকশা ধরার জন্য।

উফ, কপালটা আজ খারাপ…!! আজ কার মুখ দেখে উঠেছি কে জানে… একটা রিকশা পর্যন্ত নেই !! রবিবার বলে কি এদেরও ছুটি ঘোষণা করে দিলো নাকি সরকার থেকে !! হায় ভগবান…!!!

মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে রিকশা না পেয়ে অগত্যা হেঁটেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত মনে মনে নিয়ে নিলো পারমিতা… যেমন ভাবা, ওমনি যেই না উল্টো দিকে ঘুরেছে হাঁটার জন্য, হঠাৎ মুখোমুখি তার সাথে… মানে কৃষ্ণেন্দুর সাথে… দুজনের মধ্যেই একটা অপ্রস্তুত ভাব… দুজনেই নিশ্চুপ। কেউই বুঝে উঠতে পারছে না কি উচিত, কি অনুচিত… কয়েকটা মাত্র সেকেন্ডের সেই মুখোমুখি… অথচ মানব শরীর বা মাথা বা আরও স্পেসিফিক ভাবে বললে, ব্রেন, কি জিনিস তা তারা টের পেয়েছিল সেই কয়েক সেকেন্ডেই… দীর্ঘ ৫ বছরের যে মনের এক ঐশ্বরিক মেলবন্ধনের রসাস্বাদন তারা করেছিল, ক্ষনিকের জন্য তা সব যেন ভেসে উঠেছিলো চোখে… মনে পড়েছিলো পারমিতার সেই শেষ মুহূর্তের কথা… যখন জয়ী হয়েছিল দুজনের রাগ, দুজনের অভিমান… স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিল সন্দেহ… আর ভুক্তভুগি হয়েছিল সম্পর্কটা… হয়তো…. হয়তো কৃষ্ণেন্দুও সেটাই ভাবছিলো…

চকিত ফিরলো পারমিতার। চোখটা অভ্যেস বসত, একটু ভিজে গেছে… কানের উপর লুটিয়ে পরা চুলের গোছা তুলতে তুলতে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো পারমিতা।

– কি রে, কোথায় যাচ্ছিস??

থমকে গেলো পারমিতা। সিক্ত হৃদয় থেকে বেরিয়ে এলো অপ্রকাশিত এক চাপা আবেগ মেশানো হাসি… হয়তো অপেক্ষা করছিলো এরকমই কিছুর… বা হয়তো শুনতে চাইছিলো কৃষ্ণেন্দুর দিক থেকেই প্রথম কোনো কথা… বা হয়তো চাইছিলো, তাকে একবার আজ হয়তো ডাকবে “পারমিতা” বলে, আর সঙ্গে সঙ্গে সব রাগ, অভিমান মুছে ফেলে পারমিতা আবার ধরা দেবে তার মনের মাঝে… অনেক গুলো হয়তো’র ঘেরাটোপে আবদ্ধ পারমিতা, “কেমন আছিস তুই?” বলে, চোখ মুছতে মুছতে ঘুরে দাঁড়ালো… দেখে, সামনে তার দাদা দাঁড়িয়ে…

– মানে?? কেমন আছি আমি, মানে?? কি হয়েছে কি তোর !! কোথায় যাচ্ছিস??

পারমিতার চোখ ভেজা দৃষ্টি তখন দাদাকে অতিক্রম করে পিছনে ছুটছে… কৃষ্ণেন্দুর পিছনে পিছনে… কৃষ্ণেন্দু তখন হাঁটছে… সেই নিশ্চুপ… নির্বাক…।।

                            (Onuvutir Soujonye – অনুভূতির সৌজন্যে)

Create a website or blog at WordPress.com

Up ↑